রবিবার, ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ট্রোক: লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা

নিউজটি শেয়ার করুন

স্বদেশবিচিত্রা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক : স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা দ্রুত চিকিৎসা না করালে রোগীর পঙ্গুত্ব বা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। সে কারণে, মস্তিষ্কের এই ভয়ংকর ব্যাধি সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

স্ট্রোক কী?
অনেকে স্ট্রোকের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাককে মিলিয়ে ফেলেন। এই দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কে আঘাত হানে। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সেখানকার কোষগুলো মারা যায়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কারণ রক্তের মাধ্যমেই কোষে অক্সিজেন পৌঁছায়। কোনো কারণে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হলে, রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।

স্ট্রোকের ঝুঁকিতে কারা?
সাধারণত ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকলেও, তরুণ বা শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে। কভিড-১৯ মহামারির সময় ভাইরাস সংক্রমণের জটিলতা হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদেরও স্ট্রোক হতে দেখা গেছে। যেসব শিশু জন্মগত নীলাভ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, তারাও অধিক হারে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর তুলনায় পুরুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকেন।

স্ট্রোকের প্রকারভেদ
স্ট্রোক প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে:
মাইল্ড স্ট্রোক: এই ধরনের স্ট্রোকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। এটি মূলত বড় ধরনের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ।
ইসকেমিক স্ট্রোক: এই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বা শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধে। বয়সজনিত কারণ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল বা মেটাবলিক সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীরা এ ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকেন।
হেমোরেজিক স্ট্রোক: এতে মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তপাত হয়। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত এ ধরনের স্ট্রোকের জটিলতায় ভোগেন।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
স্ট্রোকের কারণ নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রক্ত পরীক্ষা করেন, যাতে রক্ত জমাট বাঁধা, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বা ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে, রোগ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে ক্যারোটিড ডুপ্লেক্স পরীক্ষা, ইসিজি, ইকো, ব্রেইনের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হয়ে থাকে। স্ট্রোক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না, তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা শুরু করা উচিত নয়।

স্ট্রোকের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘সময়’। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, রোগীর ক্ষতির আশঙ্কা ততই কমে। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে রোগীকে মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়।

মাইল্ড স্ট্রোকের চিকিৎসা: মাইল্ড স্ট্রোকের রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বড় ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। রোগের কারণ নির্ণয় করে ওষুধ এবং রক্ত জমাট দূরীকরণের চিকিৎসার মাধ্যমে এবং প্রয়োজনে ব্যায়ামের সাহায্যে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

গুরুতর স্ট্রোকের চিকিৎসা: বড় ধরনের স্ট্রোক হলে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করে মস্তিষ্কে আঘাত বা সমস্যা নিরূপণ করার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা শুরু করেন। মস্তিষ্কের বা মহাধমনীর নালিতে বড় ধরনের ব্লক থাকলে নিউরোলজিস্টরা স্টেন্ট বা রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন। বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হলে জরুরি সার্জারির মাধ্যমে জমাট রক্ত পরিষ্কার করে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়। v

অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ, নিনস আগারগাঁও ঢাকা
স্বদেশবিচিত্রা/এআর