স্বদেশবিচিত্রা আইন আদালত ডেস্ক : সাংবাদিক মুন্নি সাহার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার মা আপেল রানী সাহা, স্বামী কবির হোসেন, দুই ভাই তপন কুমার সাহা ও প্রণব কুমার সাহাকেও একই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুদকের পক্ষে সংস্থার উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তা গ্রহণ করেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, সাংবাদিক মুন্নি সাহা, পরিবারের সদস্যরা এবং তার স্বামী এস এম প্রমোশনসের স্বত্বাধিকারী কবির হোসেন তাদের ব্যাংক হিসাবে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।
অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। এর ফলে অনুসন্ধান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন বলে তুলে ধরা হয়।
এর আগে সাংবাদিক মুন্নি সাহা এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। ব্যাংক হিসাবগুলোতে মোট ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা আছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া, ব্যাংক হিসাবগুলোতে সন্দেহজনক ১৮৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৮ টাকা লেনদেনের তথ্যও আছে সিআইডির কাছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
তিনি জানান, মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছেন। তারা অবৈধভাবে উপার্জিত এই অর্থ নিজ এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করে আসছেন মর্মে সিআইডির কাছে অভিযোগ আসে। উল্লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু করে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা দেখতে পান যে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৪৬টি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৫টি ব্যাংক হিসাব চালু রয়েছে। হিসাব খোলার তারিখ থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক হিসাবগুলোতে সন্দেহজনক মোট ১৮৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৮ টাকা লেনদেন করা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা স্থিতি রয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন সন্দেহজনক মনে হলে সেগুলো অবরুদ্ধ করার আবেদন করা হয়।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র স্পেশাল জজ, মহানগর দায়রা জজ, ঢাকা উপরোল্লিখিত সন্দেহভাজন মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকাসহ ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ প্রদান করেন। আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ৩৫টি ব্যাংক হিসাবসহ মোট ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়।
সন্দেহভাজন মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
স্বদেশবিচিত্রা/এআর