শনিবার, ৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট

নিউজটি শেয়ার করুন

স্বদেশবিচিত্রা প্রতিবেদক : চিকিৎসকসহ জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২ জন ডাক্তার ও একজন গাইনী কনসালট্যান্ট নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। ২০২৩ সালের নভেম্বরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও আজও মিলেনি আধুনিক চিকিৎসা সেবা।

প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪০০-৫০০ জন, আন্তঃবিভাগে ৫০-৫৫ জন এবং ল্যাবে গড়ে ২০-৩০ জন রোগী সেবা নেয়। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার চালানো হয় ভাড়া করে আনা এনেস্থেসিওলজিস্ট দিয়ে। প্রধান সহকারী, স্টোর কিপার ও হিসাব শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদ স্বাস্থ্য সহকারীকে দিয়ে চালানো হচ্ছে। এদিকে, উপজেলার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮শ ৪৮ জনের এ হাসপাতালে তীব্র জনবল সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় সেবা প্রদানকারীদের। রোগীর সংখ্যা বাড়লে ওষুধের স্বল্পতা এবং বেডের বেশী রোগীদের খাবার সংকটে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয় রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার জনবল সংকট থাকলেও এ জনবল নিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে আসছে। ৩১ শয্যার জন্য এ হাসপাতালে ৯ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) ও মেডিকেল অফিসার (হোমিওপ্যাথিক) একজন এবং ঘোড়াঘাট উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে একজনকে নিয়ে ২ জন দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। বাকি ৭ জন মেডিকেল অফিসার পদ শূন্য। সব মিলিয়ে হাসপাতালের ১২২ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৭৪টি। এছাড়াও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, জুনিয়র মেকানিক, এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ও ৩জন ওয়ার্ড বয়, ২জন আয়া, ২জন বাবুর্চি থাকার কথা থাকলেও সবগুলো পদ শুন্য রয়েছে। তাছাড়া ৩ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৬ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৪ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী ও একজন নিরাপত্তা কর্মীর পদ শূন্য রয়েছে।

প্রতিদিনই দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীর দীর্ঘ লাইন। পুরা বহির্বিভাগ মিলে একজন ডাক্তার। পুরাতন ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও দুর্ঘটনায় আহত রোগী এবং তাদের স্বজনরা সেখানে ভিড় করে আছেন। দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক এবং অন্য স্টাফরা তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সেবাদান করছেন। হাসপাতালের প্যাথলজি, এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম রুমের সামনেও ভিড়। উপর তলায় শয্যা সংকটে অনেকে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সোনারপাড়া গ্রামের মঈন উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে পরিস্থিতি তাতে ইমারজেন্সি রোগী না নিয়ে আসাই ভালো। ঘণ্টার পর ঘন্টা রোগীকে নিয়ে অপেক্ষা করে রোগীর ঠিক সময়ে চিকিৎসা হচ্ছেনা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো বহির্বিভাগের প্রায় সব রোগীর চোখে মুখে হতাশার ছাপ।

এ ব্যাপারে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান মেহেদী হাসান জানান, ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন থাকলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তবে ৩১ শয্যার যে জনবল কাঠামো থাকা দরকার সেটাই নেই। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর যে পদ আছে যে জনবলের কাঠামো থাকার কথা সেখানে নাই বললেই চলে। ফলে হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম থেকে অন্যান্য প্রশাসনিক এবং হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে ২জন ডাক্তার ও একজন গাইনী কনসালট্যান্ট আছে। এ দিয়ে হাসপাতালটি চালানো খুব কষ্টকর। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি এবং প্রতিমাসে তাদেরকে চিঠির মাধ্যমে জানাচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই হয়তোবা এ সমস্যার সমাধান হবে।
স্বদেশবিচিত্রা/এআর