বুধবার, ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানুষ গান শুনছে, বিনিময়ে ভালোবাসা দিচ্ছে– এতেই আমি খুশি: দোলা

নিউজটি শেয়ার করুন

স্বদেশবিচিত্রা বিনোদন ডেস্ক : কল্পনা করুন তো, গুটি গুটি পায়ে একটি শিশু হেঁটে বেড়াচ্ছে আর রাজ্যজয়ের হাসিতে ফেটে পড়ছে। নিজ পায়ে চলতে শেখার আনন্দে মাতোয়ারা সে। কিন্তু চলতে চলতেই থেমে গেল সে, সুরের আবেশে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে নীরব দাঁড়িয়ে রইল কান পেতে। পরের দিনগুলোতেও একই দৃশ্যের অবতারণা, শুধু গানের সুরে উচ্ছ্বাসে হাত পা নাড়তে দেখা গেল। এভাবেই সুরের মূর্ছনায় ডুবে যেতে যেতে কাটতে লাগল দিন-মাস-বছর।

এখন যদি প্রশ্ন করি, যে কোমল মুখটি কল্পনা করতে বললাম, সে যখন শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের পথ ধরে সামনে আসবে, তাকে কোনো রূপে আবিষ্কার করবেন? আমাদের ধারণা, এই প্রশ্নের উত্তর সবার এক হবে না। কারণ জীবনের পাকচক্রে বদলে যায় সবার পরিচিতি। শৈশব, কৈশোর একরকম হলেও তারুণ্যে পা রাখার পর একেকজন একেক পথে হাঁটা শুরু করেন। কিন্তু আমরা যাঁর জীবন পরিক্রমার অংশ তুলে ধরতে যাচ্ছি, তাঁর ভাগ্যলিপি শৈশবেই রচিত হয়েছে।

কেননা, বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে তাঁর মনে বপন করে দিয়েছে সংগীতের বীজ। তাই গানের সঙ্গে যে একদিন তাঁর সখ্য গড়ে উঠবে– তা অনুমেয় ছিল। বাস্তবেও সেটাই হয়েছে। বলছি, সময়ের আলোচিত কণ্ঠশিল্পী অদিতি রহমান দোলার কথা। যাঁর শৈশব, কৈশোর কেটেছে নানি আর খালার সংগীতচর্চার একনিষ্ঠ শ্রোতা হিসেবে। এরপর গাইড হিসেবে পেয়েছেন বড় ভাই অদিত রহমানকে, যিনি একের পর এক ভিন্ন ধাঁচের সংগীতায়োজনের মধ্য দিয়ে অনেকের প্রশংসা কুড়িয়ে চলেছেন।

বাবা আশির দশকের আলোচিত চলচ্চিত্র প্রযোজক, যিনি দর্শক সাড়া জাগানো ‘অবরোধ’, ‘খোকনসোনা’, ‘রাজত্ব’র মতো সিনেমাগুলো প্রযোজনা করেছেন। সেই সাইদুর রহমান মানিকও একজন সংগীত পূজারি। তাই সংগীত বলয়ের মাঝেই দোলার বেড়ে ওঠা। যার সুবাদে গানের ভুবনে পা রাখতে সময় লাগেনি তাঁর। সৃষ্টির নেশায় ওঠার পর এক ভিন্ন ধাঁচের গান গেয়ে শ্রোতা মনোযোগ কেড়ে নেওয়া শুরু করেছেন তিনি। ‘বরবাদ’ সিনেমায় গাওয়া ‘চাঁদ মামা’ কিংবা তারও আগে প্রকাশিত ‘মুক্তি’ সিনেমার রয়েছে ‘আগুনের গান গাই’, ‘অমানুষ’ ওয়েব ছবির ‘রাধা’, ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমার ‘জানি তুমি ছিলে’; ‘টাকাটা কই’ নাটকের ‘মন করলা তুমি চুরি’সহ একক গান ‘জোছনা’, ‘আমি দোলা’, পাপনের সঙ্গে গাওয়া দ্বৈত গান ‘মন দরিয়া’, মাহতিম সাকিবের সঙ্গে গাওয়া ‘অনুভবে’সহ আরও বেশ কিছু গান তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সংগীতপ্রেমীদের মাঝে।

তবে অন্যান্য ভার্সেটাইল শিল্পীদের সঙ্গে দোলার পার্থক্য এখানেই যে, গান এবং নাচ– এ দুইয়ের সমন্বয়ে তার অভিনব পারফরম্যান্স তুলে ধরেন তিনি। ঠিক তাঁর প্রিয় দুই শিল্পী জেনিফার লোপেজ ও ডুয়া লিপাদের মতো। অবশ্য এ সবই দর্শক-শ্রোতাদের জানা। কিন্তু এখনও যেটি অনেকের অজানা, তা হলো– ক্ষণে ক্ষণে খোলস বদলে নতুনরূপে নিজেকে উপস্থিত করা। হ্যাঁ, আসলেই তাই। দিনভর যাঁকে আদালত প্রাঙ্গণে দেখা যায়, নানা জনের নানা আইনি সমস্যার সমাধানে ব্যস্ত থাকতে, সেই দোলা আবার আইন পেশার খোলস ছেড়ে উঠে পড়ছেন গানের মঞ্চে। অনবদ্য পরিবেশনায় উল্লাসে মাতিয়ে রাখছেন দর্শক-শ্রোতাদের; যা দেখে অনুমান করা কঠিন, কিছু সময় আগেই কোনো অবয়বে দেখা মিলেছে তাঁর।

এই দ্বৈত রূপ, ভিন্ন দুই পরিচয় এর সমন্বয় করেন কীভাবে? সে প্রশ্ন করতেই দোলা হেসে বলেন, ‘আমি কিন্তু সারাদিন গানের মধ্যেই থাকি। হ্যাঁ, এটা সত্যি বাবার ইচ্ছা পূরণে আইনি পেশার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছি। কিন্তু শিল্পী পরিচয়কে দূরে ঠেলে আলাদাভাবে কোনো কিছু করতে চাইনি।’ তাঁর এই কথায় বোঝা গেল, ছোটবেলা থেকে সংগীত নেশা যাঁকে পেয়ে বসেছে, তিনি আর যা-ই করুন না কেন, গান থেকে দূরে সরে থাকতে পারবেন না। তবু যে প্রশ্নটা থেকে যায় তা হলো– ছোটবেলা থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হওয়ার বাসনা লালন করে আসছিলেন কিনা? এর জবাবে দোলা বলেন, ‘সেমি ক্লাসিক্যাল গানের প্রতি দুর্বলতা থাকলেও সব ধরনের গানই গাইতে চেয়েছি এবং এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারকাখ্যাতির মোহে নয়; বরং সব ধরনের গান ভালো লাগে বলেই এমন চাওয়া। যেজন্য সংগীতের সব মাধ্যমেই কাজ করে যাচ্ছি। ১৭ বছরের পথ-পরিক্রমায় প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ করিনি। তাই গানের নিরীক্ষা চালিয়ে দুঃসাহস দেখাতে পারছি। মানুষ গান শুনছে, বিনিময়ে ভালোবাসা দিচ্ছে– এতেই আমি খুশি।’
স্বদেশবিচিত্রা/এআর