বুধবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু: গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস

নিউজটি শেয়ার করুন

রাজু আলীম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাঙালি জাতিসত্তা ও চেতনার এক ঐতিহাসিক কেন্দ্র, যার জন্মলগ্নেই মিশে আছে রাজনৈতিক আন্দোলন ও নবজাগরণের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে যখন ঢাকাকে পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের রাজধানী করা হয়েছিল, তখন এই অঞ্চলের মুসলিম সমাজে এক নতুন শিক্ষাগত ও রাজনৈতিক জাগরণের সূচনা হয়। কিন্তু ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেলে সৃষ্ট রাজনৈতিক ক্ষোভ প্রশমিত করতে করতে ১৯১২ সালে ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯২১ সালের ১লা জুলাই প্রায় ৬০০ একর জমিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠা এই শিক্ষালয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ নামে খ্যাতি লাভ করে। শুরুতে কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদ, ১২টি বিভাগ এবং তিনটি আবাসিক হল (ঢাকা হল, জগন্নাথ হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) নিয়ে এর পথচলা শুরু হয়েছিল। একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি হলেও, এই প্রতিষ্ঠানটিই পরবর্তীতে রাজনৈতিক সচেতনতার কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং একটি নতুন জাতির অভ্যুত্থানের ভিত্তি স্থাপন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এই প্রতিষ্ঠানটির গণতান্ত্রিক চেতনাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিল। ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ বা (ডুসু) নামে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষে এর নাম হয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ বা ডাকসু। ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রথম সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে ডাকসুর প্রভাব ছিল অপরিসীম। ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে সর্বপ্রথম সাধারণ ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, সবকিছুরই কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর ছাত্র নেতৃত্ব। ডাকসু ছিল ছাত্রদের অধিকার আদায়ের প্রাণকেন্দ্র। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ডাকসুর তৎকালীন ভিপি তোফায়েল আহমেদ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। আসাদুজ্জামানের শহীদ হওয়ার মাধ্যমে সেই গণআন্দোলন মহান গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল। এই ছাত্র সংসদ শুধু শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করেনি, বরং এটি ছিল দেশের মূল রাজনৈতিক শূন্যতার এক বিকল্প কেন্দ্র, যা দেশের দ্বিতীয় সংসদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে ডাকসু এবং সামগ্রিকভাবে ছাত্র রাজনীতি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের পথ প্রশস্ত করে। মূলত তৎকালীন ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদকে আহ্বায়ক গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। এই ১১ দফা ছিল কেবল ছাত্রদের দাবি-দাওয়া নয়, বরং পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বায়ত্তশাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা। এই কর্মসূচির ভিত্তিতেই ছাত্র-জনতা এক হয়ে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিশেষ করে ২০শে জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানের শহীদ হওয়ার ঘটনা আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দেয় এবং এর ফলে গণআন্দোলন রূপ নেয় মহান গণঅভ্যুত্থানে। এই গণঅভ্যুত্থানের তীব্রতা এতটাই প্রবল ছিল যে, আইয়ুব খান তাঁর ক্ষমতা ত্যাগ করতে এবং গোলটেবিল বৈঠকে বসতে বাধ্য হন। এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার মুখে ছাত্রসমাজই জাতিকে পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছিল এবং একটি নতুন রাজনৈতিক ইতিহাসের সূচনা করেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও ডাকসুর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ.স.ম. আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতার সামনে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করেন। এটি ছিল স্বাধীনতার প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণাগুলোর মধ্যে অন্যতম,যা বাঙালির হৃদয়ে নতুন করে সাহস আর সংগ্রামের প্রেরণা জাগিয়েছিল। এমনই সব ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিরোধের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই, যেখানে জগন্নাথ হল ও জহুরুল হক হলসহ বিভিন্ন ছাত্রাবাসে এবং শিক্ষক কোয়ার্টারে পাকিস্তানি বাহিনী বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা বাহিনীর একটি বড় অংশই ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, যারা সরাসরি রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ডাকসুর মতো একটি ছাত্র সংসদের নেতৃত্বের কারণেই এমন একটি শক্তিশালী ছাত্রসমাজ তৈরি হয়েছিল, যা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।
১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচনের কথা বলা হলেও, বাস্তবে তা কখনো নিয়মিত ছিল না।
১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে ডাকসু এবং ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ধারক। এই আন্দোলনকে সফল করার পেছনে ছাত্রদের দৃঢ়তা এবং ঐক্যই ছিল প্রধান চালিকাশক্তি। তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যখন মূল রাজনৈতিক দলগুলো দ্বিধাবিভক্ত ও আপসের পথে ছিল, তখন ছাত্রসমাজই প্রতিরোধের মশাল হাতে তুলে নেয়। ১৯৮৭ সালে নূর হোসেনের আত্মত্যাগের পর থেকেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায় এবং ১৯৯০ সালের ১০ই অক্টোবর পুলিশের গুলিতে ডা. শামসুল আলম খান মিলনের শহীদ হওয়ার পর তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই ঘটনার পরপরই ডাকসুসহ ২২টি ছাত্র সংগঠন একত্রিত হয়ে গঠন করে ‘সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য’। এই ঐক্য রাজনৈতিক দলের প্রভাব উপেক্ষা করে নিজেদের ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে, যা শুধু এরশাদের পদত্যাগ দাবি করেনি, বরং একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখাও তুলে ধরেছিল। ছাত্রঐক্যের নেতৃত্বেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সারা দেশে তীব্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কারফিউ ভেঙে মিছিল বের করে ছাত্ররা স্বৈরাচারী সরকারের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। গণআন্দোলনের এই পর্যায়ে ছাত্রদের দৃঢ় অবস্থান ও আপসহীন মনোভাবের কাছে এরশাদ সরকার টিকতে পারেনি। অবশেষে, ১৯৯০ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন এবং ৬ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছিল যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্রসমাজ কেবল একটি অংশ নয়, বরং সংকটের মুহূর্তে তারা একটি শক্তিশালী ও সিদ্ধান্তমূলক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

১৯৯০ সালের পর থেকে প্রায় তিন দশক ধরে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। এই দীর্ঘ বিরতির কারণ হিসেবে ক্ষমতাসীন দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিরোধীদের বিজয়ের আশঙ্কাই প্রধানত দায়ী বলে মনে করা হয়। এই সময়ে ছাত্র রাজনীতিতে ‘লেজুড়বৃত্তি’র প্রভাব ব্যাপক আকার ধারণ করে, যেখানে ছাত্র সংগঠনগুলো স্বায়ত্তশাসন হারিয়ে মূল রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। এই পরিস্থিতি ক্যাম্পাসে দখলদারি, চাঁদাবাজি এবং সহিংসতাকে উৎসাহিত করে। শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয় এবং মেধার পরিবর্তে পেশীশক্তি প্রাধান্য লাভ করে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকারের কথা বলার জন্য একটি বৈধ ফোরাম থেকে বঞ্চিত হয়, যার ফলে তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ জমা হতে থাকে। অবশেষে, দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষার পর ২০১৯ সালের ১১ই মার্চ বহু প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই নির্বাচনটি শুরু থেকেই বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্কের জন্ম দেয়। ভোট কারচুপি, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটদানে বাধা, প্রার্থীদের ওপর হামলা এবং ব্যালট বাক্স নিয়ে লুকোচুরির মতো নানা অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি অবশ্য তাদের প্রতিবেদনে জানায় যে নির্বাচনে কোনো কারচুপির ঘটনা ঘটেনি। তাদের মতে, রোকেয়া হলে যে ব্যালট বাক্স নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তা ছিল ‘ব্যালট-বাক্স’ ও ‘ব্যালট পেপার রক্ষিত ট্রাঙ্কের’ মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি, যা কিছু গণমাধ্যম ও অভিযোগকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছড়িয়েছিল। অন্যদিকে, ডাকসু নির্বাচনের ভিপি পদে বিজয়ী নুরুল হক নুর এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ছাত্রলীগ কোনো সদস্য পদেও জয়ী হতে পারত না। ২০১৯ সালের নির্বাচনের ফলাফল ছিল এক ধরনের মিশ্র বার্তা। যেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর ভিপি নির্বাচিত হন, সেখানে সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য প্রায় সব পদে জয়লাভ করে ছাত্রলীগ। এই ফলাফলটি ছিল এক ধরনের দ্বৈততা, যা এক দিকে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিবাদী মনোভাবের প্রকাশ ঘটায়, অন্যদিকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রচলিত দলীয় রাজনৈতিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের কথাও তুলে ধরে। এই নির্বাচন গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের পরিবর্তে দেশের জাতীয় নির্বাচনের ত্রুটিগুলোকেই যেন প্রতিফলিত করেছিল, যা ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করে।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও। এই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের ছাত্র রাজনীতিতে প্রথম বৃহৎ নির্বাচনী আয়োজন হিসেবে ২০২৫ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিবিড়ভাবে কাজ করছে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে তিনটি পৃথক কমিটি গঠিত হয়েছে, যারা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সাবেক ডাকসু নেতৃবৃন্দ, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের সাথে ধারাবাহিক মতবিনিময় করছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের বিতর্ক এড়াতে এবার প্রথমবারের মতো হলের বাইরে ছয়টি পৃথক কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে নতুন এই রাজনৈতিক পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের সংশয় ও আলোচনাও বিদ্যমান। সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না মন্তব্য করেছেন, “ডাকসু নির্বাচনের ঢোল বেজেছে কিন্তু নাচ নেই” – তার এই মন্তব্য ছাত্র রাজনীতিতে সত্যিকারের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করে। সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, ২০১৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তবে তিনি নতুন করে কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থান সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরও বিভাজনের কারণে নির্বাচন হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বর্তমান ছাত্রনেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি এবং উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে কয়েকটি স্বতন্ত্র প্যানেল এবারের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতিতে নতুন উদ্দীপনা দেখা গেলেও, অতীতের লেজুড়বৃত্তির তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠেছে। এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন কেবল একটি ক্যাম্পাস নির্বাচন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের একটি বড় পরীক্ষা। এটি দেখিয়ে দেবে, ছাত্র সমাজ কি দলীয় লেজুড়বৃত্তির চক্র থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে, নাকি আবারও মূলধারার রাজনীতির ছায়ায় নিজেদেরকে বিলীন করে দেবে। এই নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের পরবর্তী রাজনৈতিক গতিপথের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।

রাজু আলীম
কবি ,সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব