রবিবার, ৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অনেকের পেশা বদলে দিয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা

নিউজটি শেয়ার করুন

স্বদেশবিচিত্রা প্রতিবেদক : রংপুর সদর উপজেলার পানবাজার এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন পেশায় একজন ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রেতা। ভ্যানে করে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাছ বিক্রি করেন। বাজারে এখন হাড়িভাঙ্গার রমরমা মৌসুম। তাই মাছ ব্যবসা সাময়িকভাবে বাদ দিয়ে ভ্যানে করে আম বিক্রি করছেন। এতে মাছের চেয়ে বেশি লাভ হচ্ছে। হারাগাছ এলাকার আরিফ হোসেন ভ্রাম্যমাণ তরকারি বিক্রেতা। গঙ্গাচড়া উপজেলার রাশেদ মিয়াও একজন ভাসমান তরকারি বিক্রেতা। আব্দুল ছালাম ভ্যানে করে কলা বিক্রি করতেন। হাড়িভাঙ্গা আমের মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে তারা বিভিন্ন বাগান অথবা হাট থেকে হাড়িভাঙ্গা আম কিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। হাজারো ভ্রাাম্যমাণ ছোটখাট পেশাজীবী সাময়িকভাবে পেশা বদল করে হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রিতে ঝুঁকে পড়েন।

তারা জানান, হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রিতে মাছ, সবচির চেয়ে বেশি লাভ হয়। তাই তারা সাময়িকভাবে মূল পেশা বন্ধ রেখে আম বিক্রি করতে নেমেছেন। এছাড়া কলা, পেয়ারা মাল্টা, আপেলসহ অন্যান্য ফলের চাহিদা কমে যাওয়ায় ওইসব ব্যসায়য়ীও হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া এক মাস শুধু হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছ থেকে পেড়ে ১৫ হাজারে বেশি শ্রমিক মাসে আয় করবে ১৮ কোটি টাকার ওপর। হাঁড়িভাঙ্গা যেমন রংপুরের আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়তা করছে সেই সাথে শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। রংপুরে মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জের বেশকটি বাগান ঘুরে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা হলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

খাড়াগাছ পশ্চিমপাড়া এলাকার আম পাড়া শ্রমিক আবু সাইদ, মোসলেম উদ্দিনসহ কয়েকজন জানালেন, এই সময় ক্ষেতে খামারে কাজ থাকেনা। বাড়িতে বসে থাকতে হয়। তাই আমের মৌসুমে এক-দেড় মাস আম বাগান পাহারা ও গাছ থেকে আম পেরে মাসিক ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পাচ্ছি। এই টাকা সংসারের বাড়তি কাজে লাগছে। তারা বলেন, তাদের মত ১৫ হাজারের বেশি শ্রমিক এসময় গাছ থেকে আম পাড়ার কাজ করছেন। বৈলডোপ গ্রামের আম বাগানের মালিক নজরুল ইসলাম ও মানজারুল ইসলাম বলেন, তাদের নিজের ৪টি বাগান রয়েছে। এছাড়া তারা দুজনে আরও ৪টি বাগান লিজ নিয়েছেন। এবার আমের দাম স্বাভাবিক থাকায় আম পাড়ার শ্রমিকরাও মনেয়োগ দিয়ে কাজ করছেন। তারা বলেন, এই অঞ্চলে ৩ হাজারে বেশি আম বাগান রয়েছে। একেকটি বাগানে দেড় থেকে দুইশ গাছ রয়েছে। কোন কোন বাগানে আরও বেশি গাছ রয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ১ হাজার ৯শ হেক্টরের বেশি জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার মেট্রিক টনের ওপর। মৌসুমের শুরুতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং মৌসুমের শেষ দিকে প্রতি কেজি হাড়িভাঙ্গা আম ১৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হয়। ২০০ কোটি টাকার বেশি আম বিক্রি হবে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার গরমের কারণে নির্ধারিত সময়ের একটু আগে আম পেকেছে। ফলনও ভাল হয়েছে। এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
স্বদেশবিচিত্রা/এআর